চীনা কোম্পানি ডিপসিক (Deepseek) সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে মুক্তি পাওয়ার পর, অ্যাপল স্টোরে সবচেয়ে বেশিবার ডাউনলোড করা ফ্রি অ্যাপের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে। এর হঠাৎ জনপ্রিয়তা ও মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে খরচের পার্থক্য প্রযুক্তির বাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন এনে দিয়েছে। সিলিকন ভ্যালির উদ্যোক্তা মার্ক আন্দ্রিসেন ডিপসিককে AI দুনিয়ার ‘অন্যতম যুগান্তকারী আবিষ্কার’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
Deepseek এর নতুন AI মডেলটি বাজারের শীর্ষ এআই মডেল চ্যাটজিপিটির সমকক্ষ। তবে চ্যাটজিপিটির তুলনায় তাদের মডেলটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে অনেক কম। ডিপসিকের গবেষণা দল জানিয়েছে, তাদের অ্যাপটি তৈরি করতে ৬০ লাখ ডলার খরচ হয়েছে যা যুক্তরাষ্ট্রের AI কোম্পানিগুলোর খরচের তুলনায় অনেক কম, যেখানে খরচ হয়েছে শতকোটি ডলার।
ডিপসিক (Deepseek) কী?
ডিপসিক হলো একটি চীনা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স কোম্পানি। যার সদর দফতর হাংঝু, চীনে অবস্থিত। এটি ২০২৩ সালের জুলাইয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়, কিন্তু তাদের জনপ্রিয় AI অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাপটি ২০২৫ সালের ১০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে মুক্তি পায়। এর পর থেকে এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
Deepseek এর প্রতিষ্ঠাতা লিয়াং ওয়েনফেং:
ডিপসিকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা লিয়াং ওয়েনফেং। তিনি একজন তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ের গ্র্যাজুয়েট, যিনি নিজের প্রতিষ্ঠিত হেজ ফান্ডের অর্থ ব্যবহার করে ডিপসিক প্রতিষ্ঠা করেন। লিয়াং, এনভিডিয়ার বিপুল সংখ্যক এ-১০০ চিপ সংগ্রহ করে এই চ্যাটবটের প্রযুক্তি তৈরি করেন, যদিও বর্তমানে চীনে এই ধরনের চিপের রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। তার সংগ্রহে থাকা ৫০ হাজার চিপের মাধ্যমে, তিনি ডিপসিক প্রতিষ্ঠা করার জন্য তুলনামূলক কম দামে প্রযুক্তি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।
Deepseek এর জনপ্রিয়তা:
ডিপসিকের এআই অ্যাসিস্ট্যান্টটি অ্যাপল স্টোর এবং ডিপসিকের ওয়েবসাইটে বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যাচ্ছে। (WEB Site LINK HERE) খুব কম সময়েই অ্যাপটি অ্যাপল স্টোরে শীর্ষ রেটিংয়ের ফ্রি অ্যাপ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ব্যবহারকারীরা জানিয়েছেন, এই অ্যাপটি তাদের লেখাকে আরও গভীরতা ও গম্ভীরতা প্রদান করে। তবে, কিছু ক্ষেত্রে, এই চ্যাটবটটি কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে অপারগতা প্রকাশ করে, যেমন: “১৯৮৯ সালের তিয়ানানমেন স্কোয়ারে কী হয়েছিল?” এ বিষয়ে ডিপসিক জানায় যে, এটি একটি সহায়ক এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট, যা রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল বিষয়গুলোর উত্তর প্রদান করতে সক্ষম নয়।
এনভিডিয়া: মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিযোগিতায় বিপর্যয়
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক এনভিডিয়া, যারা এআই পরিচালনার জন্য শক্তিশালী চিপ তৈরি করে থাকে, বর্তমানে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। ডিপসিকের AI মডেল তৈরিতে খরচ কম হওয়ায়, মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো এআই প্রযুক্তি তৈরিতে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে, তার তুলনায় Deepseek এর খরচ অনেক কম। ফলে, Deepseek এর জনপ্রিয়তা এবং খরচের পার্থক্য প্রযুক্তি বাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন এনে দিয়েছে।
এনভিডিয়ার শেয়ার ২৭ জানুয়ারি ৬০ হাজার কোটি ডলার কমেছে যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একদিনে কোনো কোম্পানির জন্য সর্বোচ্চ ক্ষতি। এতদিন এনভিডিয়া ছিল বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান প্রতিষ্ঠান কিন্তু এখন তাদের বাজার মূল্য ৩.৫ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে ২.৯ ট্রিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে এবং তারা মাইক্রোসফট ও অ্যাপলের পর তৃতীয় স্থানে চলে এসেছে।
Deepseek এর সাফল্যের কারণ:
Deepseek তাদের AI মডেল তৈরিতে কম খরচে কার্যকর প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। AI এর বাজারে খরচের এই পার্থক্য বিশ্বব্যাপী চিপ প্রস্তুতকারী এবং DATA সেন্টার পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বাজারে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিপসিকের সাফল্য ভবিষ্যতে AI বাজারের গঠনে একটি নতুন বাস্তবতা সৃষ্টি করতে পারে। এতদিন ধারণা করা হতো যে, উন্নত AI প্রযুক্তি তৈরিতে বৃহৎ বাজেট এবং অত্যাধুনিক চিপ প্রয়োজন। তবে ডিপসিক এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে এবং এআই প্রযুক্তির ভবিষ্যত বদলে দিচ্ছে।