ট্রেডিং বা বিনিময় এর জগতে ক্রস কারেন্সি পেয়ার (Cross Currency Pair Explained) হচ্ছে
সেই কারেন্সি পেয়ার যেগুলোর মধ্যে মার্কিন ডলার (USD) নেই। অনেক বছর আগে যখন কারেন্সি
এক্সচেঞ্জ করা হতো, তখন এক মুদ্রাকে অন্য মুদ্রায় রূপান্তর করতে প্রথমে
সেটিকে ডলারে রূপান্তর করা বাধ্যতামূলক ছিল। তবে সময়ের সাথে সাথে এই পদ্ধতি বদলে গেছে এবং
এখন ক্রস কারেন্সি পেয়ারের মাধ্যমে সরাসরি এক মুদ্রাকে অন্য মুদ্রায় রূপান্তর করা সম্ভব।
ক্রস কারেন্সি পেয়ার কি?
ক্রস কারেন্সি পেয়ার হলো মুদ্রার একটি জোড়া যা বিনিময় করা হয় মার্কিন ডলার ব্যবহার না করে।
উদাহরণস্বরূপ ব্রিটিশ পাউন্ড (GBP) এবং জাপানি ইয়েন (JPY) একে অপরের সাথে বিনিময় করা যেতে পারে। যেখানে মার্কিন
ডলারের (USD) কোনও প্রভাব নেই। এই ধরনের পেয়ারের মাধ্যমে আপনি মার্কেটের ট্রেডিং সুবিধা পাবেন
এবং সরাসরি একটি মুদ্রাকে অন্য মুদ্রায় পরিণত করতে পারবেন।
এই পরিবর্তনটির মাধ্যমে এক মুদ্রা থেকে অন্য মুদ্রায় রূপান্তর করার প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ
আপনি এখন সরাসরি GBP/JPY, EUR/GBP, অথবা EUR/JPY এর মতো ক্রস কারেন্সি পেয়ারে ট্রেড করতে পারবেন।
ক্রস কারেন্সি পেয়ার কিভাবে কাজ করে?
প্রাচীনকালে যদি আপনি ব্রিটিশ পাউন্ড (GBP) এর পরিবর্তে জাপানি ইয়েন (JPY) নিতে চাইতেন তখন আপনাকে প্রথমে ব্রিটিশ পাউন্ডকে
ডলারে রূপান্তর করতে হতো এবং তারপর সেই ডলারকে ইয়েনে রূপান্তর করতে হতো। বেশ জটিল এই দুই ধাপের প্রক্রিয়া ও সময়সাপেক্ষ ছিল।
বর্তমানে প্রযুক্তির উন্নতির ফলে ক্রস কারেন্সি পেয়ারের মাধ্যমে এই জটিলতা দূর হয়েছে।
এখন আপনি সরাসরি GBP/JPY পেয়ারে লেনদেন করতে পারেন। যেখানে মার্কিন ডলারের কোন ভূমিকা নেই।
আপনি সরাসরি এক মুদ্রা থেকে অন্য মুদ্রায় ট্রেড করতে পারেন এবং ডলারের উপর নির্ভর না করেই আপনার
ট্রেডিংকে আরও কার্যকর করতে পারেন।
নীচে কিছু জনপ্রিয় ক্রস কারেন্সি পেয়ার টেবিল আকারে দেওয়া হলো:
কারেন্সি পেয়ার | সংক্ষিপ্ত নাম | দেশের নাম ১ | দেশের নাম ২ |
EUR/JPY | ইউরো / ইয়েন | ইউরোপীয় ইউনিয়ন | জাপান |
GBP/JPY | পাউন্ড / ইয়েন | যুক্তরাজ্য | জাপান |
EUR/GBP | ইউরো / পাউন্ড | ইউরোপীয় ইউনিয়ন | যুক্তরাজ্য |
AUD/JPY | অস্ট্রেলিয়ান ডলার / ইয়েন | অস্ট্রেলিয়া | জাপান |
EUR/AUD | ইউরো / অস্ট্রেলিয়ান ডলার | ইউরোপীয় ইউনিয়ন | অস্ট্রেলিয়া |
GBP/AUD | পাউন্ড / অস্ট্রেলিয়ান ডলার | যুক্তরাজ্য | অস্ট্রেলিয়া |
EUR/CHF | ইউরো / সুইস ফ্রাঙ্ক | ইউরোপীয় ইউনিয়ন | সুইজারল্যান্ড |
GBP/CHF | পাউন্ড / সুইস ফ্রাঙ্ক | যুক্তরাজ্য | সুইজারল্যান্ড |
AUD/CHF | অস্ট্রেলিয়ান ডলার / সুইস ফ্রাঙ্ক | অস্ট্রেলিয়া | সুইজারল্যান্ড |
CAD/JPY | কানাডিয়ান ডলার / ইয়েন | কানাডা | জাপান |
EUR/CAD | ইউরো / কানাডিয়ান ডলার | ইউরোপীয় ইউনিয়ন | কানাডা |
GBP/CAD | পাউন্ড / কানাডিয়ান ডলার | যুক্তরাজ্য | কানাডা |
NZD/JPY | নিউজিল্যান্ড ডলার / ইয়েন | নিউজিল্যান্ড | জাপান |
EUR/NZD | ইউরো / নিউজিল্যান্ড ডলার | ইউরোপীয় ইউনিয়ন | নিউজিল্যান্ড |
GBP/NZD | পাউন্ড / নিউজিল্যান্ড ডলার | যুক্তরাজ্য | নিউজিল্যান্ড |
এই পেয়ারের মাধ্যমে ট্রেডাররা সরাসরি এক মুদ্রাকে অন্য মুদ্রায় রূপান্তর করতে পারে। মার্কেটের ভিন্নতা এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ঘটনায় এগুলোর মূল্য উঠা-নামা করে।
ক্রস রেট গণনার পদ্ধতি:
যদিও বেশিরভাগ ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম বা ব্রোকাররা আপনার জন্য এই গণনা করে দেয় তারপরও ক্রস কারেন্সির রেট গণনার পদ্ধতি জানা খুবই উপকারী। এটি আপনাকে বুঝতে সাহায্য করবে কীভাবে বিভিন্ন কারেন্সি একে অপরের সাথে সম্পর্কিত এবং কীভাবে তাদের ট্রেডিং প্রাইস নির্ধারিত হয়।
ক্রস কারেন্সি পেয়ারের বিড (buy) এবং আসক (sell) প্রাইস নির্ধারণ করতে সাধারণত দুটি পেয়ার ব্যবহৃত হয়। যেগুলোর মধ্যে ডলার থাকে। ধরুন আপনি GBP/JPY এর বিড এবং আসক প্রাইস নির্ধারণ করতে চান। এই ক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমে GBP/USD এবং USD/JPY এর বিড এবং আসক প্রাইস দেখতে হবে।
কেন দুইটি পেয়ারের দরকার?
কারণ GBP/JPY ক্রস পেয়ার হলেও এটি মার্কেটের মধ্যে ডলারের উপর ভিত্তি করে কাজ করে। প্রথমে GBP/USD এবং USD/JPY এর মাধ্যমে দুই ধাপের প্রক্রিয়া করা হয়। এরপরে তাদের বিড ও আসক প্রাইস থেকে GBP/JPY এর প্রাইস নির্ধারণ করা হয়।
বিড এবং আসক প্রাইস কিভাবে নির্ধারণ করবেন?
ক্রস কারেন্সির বিড এবং আসক প্রাইস বের করার সূত্র হলো:
বিড প্রাইস:
GBP/USD এর বিড প্রাইস X USD/JPY এর বিড প্রাইস
আসক প্রাইস:
GBP/USD এর আসক প্রাইস X USD/JPY এর আসক প্রাইস
উদাহরণস্বরূপ:
- GBP/USD এর বিড/আসক প্রাইস: 1.6218/1.6220
- USD/JPY এর বিড/আসক প্রাইস: 89.84/89.86
তাহলে GBP/JPY এর বিড এবং আসক প্রাইস হবে:
- বিড প্রাইস: 1.6218 X 89.84 = 145.70
- আসক প্রাইস: 1.6220 X 89.86 = 145.75
Cross Currency Pair পেয়ারে ট্রেডিংয়ের সুবিধা:
ক্রস কারেন্সি পেয়ারে ট্রেডিং করার বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো মার্কিন ডলারের বাইরে ট্রেডিং করার ক্ষমতা। এই পেয়ারের মাধ্যমে মার্কেটের অনন্য প্রবণতা বোঝা এবং বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক ইভেন্টের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করা সহজ হয়। এছাড়া, কিছু পেয়ারের ভোলাটিলিটি বেশি থাকে, যা ট্রেডারদের জন্য বড় ধরনের সুযোগ সৃষ্টি করে।
ক্রস কারেন্সি পেয়ার সম্পর্কিত সাধারণ প্রশ্ন:
Cross Currency Pair কী?
ক্রস কারেন্সি পেয়ার হলো মুদ্রার সেই জোড়া যেগুলোর মধ্যে মার্কিন ডলার থাকে না। এটি ট্রেডারদের সরাসরি এক মুদ্রাকে অন্য মুদ্রায় রূপান্তর করতে সাহায্য করে।
ক্রস কারেন্সি পেয়ার ট্রেডিংয়ের সময় কি মার্কিন ডলার দরকার?
না, ক্রস কারেন্সি পেয়ারে মার্কিন ডলারের কোন ভূমিকা নেই। আপনি সরাসরি দুটি ভিন্ন মুদ্রার মধ্যে ট্রেড করতে পারেন।
কিভাবে ক্রস কারেন্সি পেয়ার নির্ধারণ করা হয়?
ক্রস কারেন্সি পেয়ার নির্ধারণের জন্য দুটি প্রধান পেয়ার ব্যবহৃত হয় যেগুলোতে ডলার থাকে। তাদের বিড এবং আসক প্রাইস ব্যবহার করে ক্রস কারেন্সি পেয়ার নির্ধারণ করা হয়।
সব মার্কেটেই কি ক্রস কারেন্সি পেয়ার পাওয়া যায়?
হ্যাঁ, প্রায় সব ফরেক্স মার্কেটে ক্রস কারেন্সি পেয়ার পাওয়া যায়, বিশেষ করে বড় বড় মার্কেটগুলোতে।
ক্রস কারেন্সি পেয়ারে ট্রেডিংয়ের সুবিধা কি?
এর প্রধান সুবিধা হলো ডলারকে বাদ দিয়ে সরাসরি দুই মুদ্রার মধ্যে ট্রেড করার ক্ষমতা। এছাড়া, কিছু ক্রস পেয়ারের ভোলাটিলিটি বেশি হওয়ার কারণে এগুলো ট্রেডিংয়ের জন্য চমৎকার সুযোগ তৈরি করে।
উপসংহার:
ক্রস কারেন্সি পেয়ার আধুনিক ট্রেডিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি সরাসরি দুই ভিন্ন মুদ্রার মধ্যে ট্রেড করার সহজ পথ প্রদান করে। মার্কিন ডলারের উপর নির্ভর না করে ক্রস কারেন্সি পেয়ারের মাধ্যমে আপনি বৈশ্বিক অর্থনীতির পরিবর্তনের উপর নজর রেখে আরও উন্নত ট্রেডিং কৌশল তৈরি করতে পারেন। ক্রস কারেন্সির রেট গণনা এবং এর কার্যপদ্ধতি জানা থাকলে আপনি আরও বেশি দক্ষতার সাথে ট্রেড করতে পারবেন এবং সুযোগকে কাজে লাগিয়ে লাভবান হতে পারবেন।